Header Ads

রমজানকে পুঁজি করে চাটখিলে এলপি গ্যাসের দাম বেড়েই চলছে

আনোয়ারুল হায়দার, চাটখিল (নোয়াখালী) থেকেঃ
পবিত্র মাহে রমজান মাসকে পুঁজি করে নোয়াখালীর চাটখিল শহরে তরলকৃত
পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। গত ১৫ দিনে এ শহরে
প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বিপিসি গ্যাস এ
বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না, এতে করে বিপাকে পড়েছে বৃহৎ ও সাধারন গ্রাহক
গোষ্টি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সাড়ে ১২
কেজি ওজনের প্রতি সিলিন্ডার এলপি গ্যাসের সরকারী মূল্য নির্ধারন করেছে
৬৯০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। সাশ্রয়ী মূল্যের এ গ্যাস চাটখিল পৌর বাজার ও
উপজেলার হাট- বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না । মাঝে মধ্যে পাওয়া গেলেও বিক্রী হয়
চড়া দামে। বেসরকারী বিভিন্ন কোম্পানীর একই পরিমানের গ্যাস সিলিন্ডারের
দাম ১২ শত টাকার মধ্যে বিক্রিকরার নির্দেশ থাকলে ও এখানে তা উপেক্ষিত।
বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস ১৫/১৬ শ টাকা পর্যন্ত বিক্রী
করেছে। এতে সাধারন আয়ের মানুষ নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।

গত বুধবার চাটখিল পৌর বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এ
তথ্য পাওয়া যায়। ব্যবসায়ী জানান দীর্ঘদিন থেকে বিপিসি গ্যাসের সরবরাহ
বন্ধ। বিপিসি গ্যাসের একমাত্র ডিলার উপজেলার দশঘরিয়া বাজার এর সেলিম
ট্রেডার্স এর মালিক সেলিমের বিরুদ্ধে বিপিসির গ্যাস উত্তোলন কালো বাজারে
বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এখানে তারা প্রতি সিলিন্ডার যমুনা
গ্যাস-১৪৫০ থেকে ১৫০০/-, বসুন্ধরা ১৬০০, টোটাল ১৪৫০, ও কিèনহিট গ্যাস
১৪৫০ থেকে ১৬০০ টাকা বিক্রী করে থাকেন। টোটাল গ্যাসের পরিবেশক মদিনা
স্যানেটারী হাউস ও খন্দকার চশমা বিতান, ফারজানা ইলেকট্রিক সত্ত্বাধিকারী
জানান গ্যাস সিলিন্ডার চাহিদা তুলনায় সরবরাহ কম। তাছাড়া গ্যাস আনতে
পরিবহনে পথে পথে অনেক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। গত ৩/৪ মাস যাবত তারা প্রতি
সিলিন্ডার গ্যাস ১৩ থেকে ১৪ শত টাকা বিক্রী করে আসলেও বাড়তি দামের জন্য
স্থানীয় বিক্রেতারা গ্যাস সরবরাহ কারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে দোষারূপ করেছেন।
তাদের দাবী সংশ্লিষ্ট কোম্পানী গুলো ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস
সরবরাহ করছে না। চাটখিল সিএন্ডবি রোডস্থ ক্লিনহিট গ্যাসের ডিলার মেসার্স
বাইশসিন্দুর ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী মো: রাশিদুল হাসান পলাশ সমকালকে
বলেন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুলতার কারনে গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়তি।
তিনি প্রতি সিলিন্ডার ক্লিনহিট ও যমুনা গ্যাস ১৪৬০-১৫০০ টাকায় পাইকারী
বিক্রী করছেন। খুচরা বিক্রেতারা ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশি বিক্রী করে
থাকেন। অপরদিকে পরিবেশকরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম
বাড়াচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন ক্রেতারা।
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা গৃহিনী রেনু বেগম, শিক্ষিকা ফারজানা
খানম, সমাজ সেবিকা খুকি আক্তার, অভিযোগ করে বলেন তারা ১৪ শত টাকা করে
গ্যাস সিলিন্ডার কিনে ১২ থেকে ১৪ দিনের বেশী জ্বালাতে পারেন না। পূর্বে
এক সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে পুরো মাস চলে যেত। তাদের দাবী প্রতি সিলিন্ডারে
সাড়ে ১২ কেজি গ্যাস থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে পাওয়া যায় ৮ থেকে ৯ কেজি।
গ্রাহকরা প্রতারিত হলে ও দেখার কেউ নেই। কাগজে কলমে উপজেলা টাস্ক ফোর্স
কমিটি থাকলে ও তৎপরতা না থাকায় ভোক্তা সাধারন প্রতিনিয়ত হয়রানি ও
প্রতারিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা টাস্ক ফোর্স কমিটির সভাপতি ও চাটখিল
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী মোহাম্মদ চাহেল তস্তুুরীর সঙ্গে কথা বললে
তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে আইনগত
ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

গ্যাসের ওজন নিয়ে তেলসমতিঃ প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস বোতলে সরকারী নিয়ম
অনুযায়ী সাড়ে ১২ কেজি করে এলপি গ্যাস থাকার কথা থাকলেও তাতে ৯-১০ কেজির
বেশি গ্যাস পাওয়া যায় না বলে অনেক গ্রাহক এমনকি ক্ষোদ বিক্রেতাদের অভিযোগ
রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী এ প্রতিনিধিকে
জানান এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে গ্যাস এক
সিলিন্ডার থেকে অন্য সিলিন্ডারে পাঁচার করে থাকেন। তিনি আরও জানান, ৩৫
হাজার টাকা মূল্যের ওই মেশিন দিয়ে গ্যাস পরিপূর্ন সিলিন্ডার থেকে অন্য
সিলিন্ডারে গ্যাস পাঁচার করে ওজনে কম দিলেও দামে কম নেই। অথ্যাৎ সাড়ে ১২
কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস শূন্য বোতলে ২-৩ কেজি করে গ্যাস
পাঁচার করে থাকে। এ কাজ করতে গিয়ে এক দিকে যেমন গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছে
অপর দিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফেরনে প্রাণ হানির আশংকা থাকে। এছাড়াও
প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের গায়ে স্পষ্ট অক্ষরে গ্যাসের ওজন সাড়ে ১২ কেজি
লেখা থাকার নিয়ম থাকলেও শুধুমাত্র কিèনহিট গ্যাস বোতল ছাড়া অন্য কোন
গুলোতে লেখা নেই। এছাড়াও বাজারে নকল ও নিম্ন মানের গ্যাস সিলিন্ডারে
গ্যাস সরবরাহ করায় বিষ্ফোরনের আশংকা রয়েছে।

নকল গ্যাস সিলিন্ডারে বাজার সয়লাবঃ টোটাল গ্যাসের সিলিন্ডার বোতল তৈরি হয়
ফ্রান্সে। এর ওজন সাড়ে ১২ কেজি বিক্রয় মূল্য ১৪৬০-১৫০০ টাকা আর নকল
সিলিন্ডারে গ্যাসের ওজন ১০ কেজি বিক্রয় মূল্য আসল গ্যাসের সমান। ক্লিনহিট
গ্যাসের বোতল তৈরি হয় অষ্ট্রেলিয়ায়। ১২ কেজি সিলিন্ডার বোতলের মূল্য
১৪৫০-১৫০০ টাকায়। নকল ক্লিনহিটের ওজন ১০ কেজি বিক্রয়মূল্য আসলের সমান। এ
ব্যাপারে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ও সদ্য যোগদান কারী চাটখিল
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী মোহাম্মদ চাহেল তস্তুুরী এর সঙ্গে কথা বললে
তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নকল ও ওজন কম দেয়ার প্রমান পাওয়া
গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


আনোয়ারুল হায়দার

No comments