Header Ads

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের

চাটখিল অফিস:
বেঙ্গল রেজিমেন্টের নায়েক (অবঃ) আবু তাহের রায়পুর উপজেলার উত্তর কেরোয়া বসু পাটওয়ারী বাড়িতে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের রিসালপুর মিলিটারী স্কুলে প্রশিক্ষণ শেষে পাক সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরে যোগদান করে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্নিঝড়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সেনা সদস্যদেরকে তিন মাসের  বিশেষ ছুটি দেওয়া হয়,ছুটি শেষে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কাজে যোগদানের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে ঢাকা সেনা নিবাসে আসেন এবং ২৫শে মার্চ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়ার ফ্লাইটের তারিখ কিন্তু ঐ রাতেই তাকে সহ ৩০০০ হাজার বাঙ্গালী সেনা সদস্যকে ক্যান্টনমেন্টের উত্তরে কুর্মীটোলায় কয়েকটি ব্যারাকে বন্দী করে, রাত ১২টায় ব্রাশ ফায়ার করে। লাইনের শেষ মাথায় থাকায় আল্লাহর মেহের বানীতে আবু তাহের এবং আবদুল মন্নান দু'জন গুলি বিদ্ধ হয়নি, বাকী সবাই নিহত হন অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া দু'জনই পালিয়ে রক্তমাখা জামা কাপড় নিয়ে ঐ রাতে পায়ে হেঁটে দশ মাইল দূরবর্তী জয়দেবপুর সেনানিবাসে চলে আসেন।
উল্লেখ্য, জয়দেবপুর সেনানিবাস ছিল ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঘাঁটি এবং এখানের কমান্ডিং অফিসার মেজর শফিউল্যার পৈত্রিক নিবাস ও ছিল রায়পুর উপজেলায় সিপাহী আবু তাহেরের কাছাকাছি স্থানে এবং এখান থেকে ২দিন পর মেজর শফিউল্যার নেতৃত্বে তারা সিলেটের তেলিয়াপাড়া হয়ে ভারত গমন করেন এবং ভারত থেকে একমাস পর অস্ত্র নিয়ে দেশে এসে হাবিলদার আবদুল মতিন পাটওয়ারীর নির্দেশক্রমে বিভিন্ন অপারেশন শেষে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে তিনিসহ তিনজনের একটি আত্মঘাতী দলের সদস্য হয়ে লক্ষ্মীপুর সামাদ একাডেমী প্রাঙ্গনে যেখানে রাজাকারদের রিক্রুটমেন্ট সেন্টার সেখানে গিয়ে গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতি নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদরের উত্তরের বিজয়নগর ঘাঁটি  হতে রওনা দিয়ে বিকেল ৩টায় লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমুহনী প্রবেশ পথের মুখে একটি চা দোকানে বসে চা পান করে। তিনজন আত্মঘাতী সদস্যদের মধ্যে ইসমাইল (সাগরদি) চা পান শেষে 'আসতেছি' বলে তাদের নিকট থেকে  চলে যায়। একঘন্টা অপেক্ষা করে ও না আসার পর নজিবউল্যা (নজরুল) এবং আবু তাহের এই দু'জনেই রাজাকারদের রিক্রুটমেন্ট সেন্টারের দিকে অগ্রসর হয় কিন্তু লক্ষ্মীপুর পোষ্ট অফিসের সামনে আসলে মুক্তিযোদ্ধাদ্বয়কে রাজাকারদের অনুচরেরা চিনে ফেলে এবং আবু তাহের ও নজিবউল্যা রাজাকারদের বেষ্টনীর মধ্যে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই পাকসৈন্যরা ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদেরকে Hold বললেও তারা না বুঝার ভান করে হাঁটতে থাকে।
 অবশেষে দু'জনকেই গ্রেফতার করে দড়ি দিয়ে একটি করে হাত বেঁধে দেওয়া হয়, অত:পর আবু তাহের প্রশ্রাব করার অনুমতি চেয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে একটি ঝোপের আড়ালে গিয়ে কৌশলে সাথে থাকা হাত বোমাটি ডোবার পানিতে ফেলে দেয়, নজিবউল্যা (নজরুল) পান খাওয়ার কথা বললে তাকে পান খেতে দেয় এই সুযোগে তিনি পান দোকনের ভিতরে হাত বোমাটি রেখে দেয় কিন্তু  দোকানদার রাজাকারদের হাত বোমাটি দেখিয়ে দেয় অত:পর তাদের দু'জনকেই বটু চৌধুরীর বাসার দোতলায় নিয়ে বন্দী করা হয়।
 শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে আবু তাহের এবং নজিবউল্যার নাক, মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে, দু'দিন পর নজিবউল্যাকে আলাদা কারে বাগবাড়ি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫দিন পর আবু তাহেরকে চোখ বেঁধে লক্ষ্মীপুর মাদামব্রীজের উপর নিয়ে দাঁড় করিয়ে বলে কলেমা শরীফ পড়ার জন্য বলে, আবু তাহের শুদ্ধভাবে কলেমা শরীফ পড়ার পর একজন পাঠান সৈন্য এসে দয়াপরবশ: হয়ে বলে ওহে আচ্ছা মুসলমান হায়, ছোড়দে, তারপর চোখ খুলে বাগবাড়ি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়, বাগবাড়িতে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণে টুমচরে বোমা বিস্ফোরণের পর সেখানের স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ কিছু লোকজনকে ধরে নিয়ে আসা হয়, পরের দিন তাদেরকে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়, ফেনী কারাগারেও প্রচুর বাঙ্গালী নারী-পুরুষকে নির্যাতন করে নিয়ে আসা হয় এবং প্রতিদিন ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে মাত্র ৪/৫জনকে ফেরত আনা হয় এভাবে ২০/২৫ দিন পর পাঞ্জাবী অফিসার বদলি হয়ে পাঠান অফিসার এসেছে দায়িত্বে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন কাহাকেও আর হত্যা করা যাবে না।
টুমচরের চেয়ারম্যান বাড়ি ফেরার সময় বন্দী আবু তাহের অনুরোধ করে জেলখানার প্রহরী হায়দারগঞ্জ নিবাসী (রায়পুর) থেকে এক টুকরো কাগজ ও একটি কাঠ পেন্সিল নিয়ে তাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে লিখেন আমি আবু তাহের বেঁচে আছি এবং বর্তমানে ফেনী কারাগারে।
আবু তাহেরের ভাগ্য সুপ্রসন্ন টুমচরের চেয়ারম্যান এবং তার লোকজন মুক্তি পেয়ে ফেনী হতে এসে চৌমুহনী যে বদলী বাসে উঠে রায়পুর আসার জন্য, সে বাসে টুমচরের চেয়ারম্যান এর পাশাপাশি সিটে এসে বসে আবু তাহেরের বাড়ির পাশের এক তৈল ব্যবসায়ী, পরিচয় হওয়ার পর তাকে ঐ চিঠি হস্তান্তর করলে তৈল বিক্রেতা আবু তাহেরের বাড়িতে ঐ চিঠি পৌঁছে দেন। চিঠি পেয়ে তার লোকজন রায়পুরের পিচ কমিটির চেয়ারম্যানকে বহু অনুনয় বিণয় করে একটি প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন হতে ছাড়পত্র নিয়ে তার কোরানে হাফেজ এক ভাইকে পাঠিয়ে ফেনী কারাগার হতে আবু তাহেরকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং তার একমাস পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।   
সৌজন্যে: অঙ্গীকার   

No comments